Friday, May 24, 2013

কুর’আনে প্রযুক্তি :: দিন ও রাতের গতিশীলতা কেন প্রয়োজন?


কুর’আনে প্রযুক্তি  :: দিন ও রাতের গতিশীলতা কেন প্রয়োজন?

satelight-pic-of-us-at-night-power-outage-northeastআসসালামুআলাইকুম ও শুভেচ্ছা সবাইকে :)
দিন ও রাতের পরিবর্তনশীলতা কেন হয়? প্রয়োজনীয়তা কি?
পৃথিবী আপন মেরুর উপর প্রায় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে ঘুরছে। অন্য কথায় বলতে গেলে তা আপন মেরুর উপর প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার মাইল বেগে চলছে। মনে করুন, যদি এর গতি প্রতি ঘণ্টায় দু’শ মাইল হয়ে যায় (এরূপ হওয়া একেবারেই অসম্ভব) তাহলে আমাদের দিন এবং আমদের রাত্র বর্তমানের অনুপাতে দশগুণ বেশী দীর্ঘ হয়ে যাবে। অত্যধিক রকমের উত্তপ্ত সূর্য প্রতি দিন যাবতীয় লতাগুল্ম জ্বালিয়ে দেবে। এতদসত্ত্বেও সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে সেগুলোকে দীর্ঘ রাতের শীতলতা চিরদিনের জন্য খতম করে দেবে। সূর্য, যা এখন আমাদের জীবনের উৎস তার পৃষ্ঠদেশে বারো হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা রয়েছে এবং পৃথিবী থেকে এর দুরত্ব আনুমানিক ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। আর এই দুরত্ব বিস্ময়করভাবে অনবরত স্থিতিশীল। এই ঘটনা আমাদের জন্য সীমাহীন গুরুত্ব রাখে। কেননা যদি এই দূরত্ব হ্রাস পায় যেমন সূর্য অর্ধেক পরিমাণ নিকটবর্তী হয়ে যায়, তাহলে জমির উপর এত উষ্ণতার সৃষ্টি হবে যে, সেই গরমে কাগজ পুড়তে থাকবে, আর যদি বর্তমান দূরত্ব দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে এমন শীতলতার সৃষ্টি হবে যে, তাতে জীবনের কোন অস্তিত্বই থাকবে না। এই অবস্থা তখন সৃষ্টি হবে যখন বর্তমান সূর্যের জায়গায় অন্য কোন অসাধারণ নক্ষত্র এসে পড়বে-এমন বৃহৎ নক্ষত্র, যার উষ্ণতা আমাদের সূর্যের চাইতে দশ হাজার গুণ বেশী। যদি ঐ নক্ষত্র সূর্যের জায়গায় হত তাহলে তা পৃথিবীকে নির্ঘাত আগুনের eunight2_pvচুল্লিতে পরিণত করত। আল্লাহ তা’আলা এ সর্ম্পকে বলনে:
010.006 إِنَّ فِي اخْتِلافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ لآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ
Al-Qur'an, 010.006 (Yunus [Jonah])
“দিন ও রাত পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আসমান ও জমিনে যা কিছু সৃষ্টি করছেনে তাতে ভয়কারী সম্প্রদায়রে জন্য নিদর্শন রয়েছে (সূরা ইউনুস ১০ : ৬)”
পৃথিবী ২৩ ডিগ্রি কোণাকারে শূন্যে ঝুঁকে আছে। এই ঝুঁকে থাকাটাই আমাদেরকে ঋতুর অধিকারী করেছে। এরই ফলশ্রতিতে জমির বেশীর ভাগ অংশ আবাদের যোগ্য হয়ে উঠেছে, বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম এবং ফলমূল উৎপাদিত হচ্ছে। পৃথিবী যদি এভাবে ঝুঁকে না থাকত তাহলে দুই মেরুর উপর সর্বদা অন্ধকার ছেয়ে থাকতো। ফলে সমুদ্রের বাষ্পসমূহ উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে পরিভ্রমণ করত এবং জমি হয় তুষার আবৃত থাকত, নয় মরুভূমিতে পরিণত হত। এ ছাড়াও আরো অনেক চিহ্নাদি ফুটে উঠত যার ফলশ্র“তিতে ঝোঁকবিহীন পৃথিবীর উপর জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে উঠত। এটা কত অবিশ্বাস্য কথা যে, জড় বস্তু নিজেই নিজেকে এভাবে এত সুন্দর করে ও যথার্থ আকার সুবিন্যস্ত করে নিয়েছে?
1Nasa_EarthNigh_PTIমহান প্রজ্ঞাময় সমস্ত জাহানের প্রতি পালক আল্লাহ তা’আলা এ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি করে তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। মানব জাতির প্রতি আল্লাহর নিয়ামত অফুরন্ত ও অগণিত। দিন রাতের পরিবর্তন তন্মধ্যে অন্যতম । নির্ধারিত নিয়মে দিনরাত্রির পরিবর্তন হচ্ছে। আর একথা বর্তমান জমানায় সবার কাছে সুস্পষ্ট যে পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর ঘোরার কারণেই দিন ও রাতের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বচক্ষে অবলোকন করছি যে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে একই নিয়মে রাতের পর দিন এবং দিনের পর রাত আসছে। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে, এই পরিবর্তনে আমাদের কি কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসছে? আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে বলেন:
017.012 وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلا
Al-Qur'an, 017.012 (Al-Isra [Isra, The Night Journey, Children of Israel])
Day_night_over_Europe“আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতপর নিষপ্রভ অন্ধকার করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে আলোকময় করেছি।“ (সূরা ইসরা ১৭ : ১২)
আধুনিক বিজ্ঞান বর্ণনা করেছে যে, এই দিন রাতের পরিবর্তন যদি না হতো তবে পৃথিবীর এক পৃষ্ঠের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যেত এবং অন্য পৃষ্ঠে ঠান্ডায় মানব জাতি সহ সমস্ত জীবকুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
028.071 قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ أَفَلا تَسْمَعُونَ
028.072 قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفَلا تُبْصِرُونَ
Al-Qur'an, 028.071-072 (Al-Qasas [The Story, Stories])
activeearth_18962
“বলুন তোমরা ভেবে দেখেছ কি আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন। আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন উপাস্য আছে কি যে তোমাদেরকে আলোকময় দিন এনে দিবে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পযর্ন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য আছে কি যে তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না?” (সূরা কাসাস ৭১-৭২)
আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জন্য পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন। যথোপযুক্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করেছেন, খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করেছেন যা দিয়ে ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণ করতে পারে। পাহাড় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী হেলে দুলে না যায়, সেখানে আর ব্যবস্থা করেছেন নদ নদী, গাছ পালা সহ প্রত্যেক জিনিসের সুসামঞ্জস্যতা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
040.064 اللَّهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ قَرَارًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَتَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
Al-Qur'an, 040.064 (Al-Ghafir [The Forgiver [God]])
তিনিই মহান আল্লাহ যিনি পৃথিবীকে আবাস যোগ্য করেছেন (সূরা গাফের৤
আল্লাহ আমাদের জ্ঞান ও সুবুদ্ধি বাড়িয়ে শান্তির পথে রাখুন।আমিন।

No comments:

Post a Comment