Friday, May 10, 2013

জেনে নিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস


বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আছছালামুআলাইকুমআপনারা সবাই কেমন আছেনসবাইকে জুমা মোবারকআজ আমি আপনাদের কাছ লিখব পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস সম্পর্কেনামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথমনামায ছাড়া কোন মুসলমানই জান্নাতে যেতে পারবে নাকেয়ামতের দিন নামাযের কথাই প্রথমে জিজ্ঞাসাসাবাদ করা হবেআমরা সবাই জানি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) শবে মেরাজের দিন মহান আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমাদের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উপহার নিয়ে এসেছেনআসুন আমরা এ্ই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস সম্পর্কে জানি
ফজরের নামায ফরজ হওয়ার কারণ
খন আদম (আ:) দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল রাতের অন্ধকারতিনি বেহেশতে কখনও রাত বা অন্ধকার দেখেননিফলে তিনি সারারাত ভীত-স্বন্ত্রস্তভাবে সময় কাটানপরে সোবহে সাদেক হলে তখন তাঁর ভয় দূর হয়এ কারণে তিনি দুই রাকাত শোকরানা নামায আদায় করেনআল্লাহ তায়ালা মহানবী (স:) এর মারফত সে নামাযকে আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেনযাতে বান্দা এ কথা স্মরণ করতে থাকে যে,যাবতীয় দু:খ-যন্ত্রণা বা ভয়-ভীতি একমাত্র আল্লাহই দূর করতে পারেনহযরত আদম (আ:) রাতের অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করে শুকরিয়া আদায় করেছিলেনআর আমরা নামাজ পড়ছি কবর এবং হাশরের অন্ধকার হতে নাজাত পাওয়ার জন্যে
প্রাত:কাল অলস দুনিয়াদের জন্য আরামের সময়এ কারণে ফজরের নামাজ আদায় তাদের উপর ভীষণ মুশকিল হয়ে পড়েসুতরাং আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদেরকে সে সকল লোক হতে পৃথক করার জন্য ফজরের নামায ফরজ করে দিয়েছেন
ফজরের ওয়াক্ত ও আল্লাহর দীদারের সময়ের সাথে সাদৃশ্য রয়েছেএ জন্য বিশেষভাবে এ সময়ের নামায আল্লাহর দীদার লাভ করার প্রধান উপায় বলে পরিগণিত হয়েছেকেননা মোনাজাত এবং আল্লাহর দরবার হাযির করার জন্য আমরা সময়ের সাথে নামাযের ওয়াক্ত লাভ করছিতখন নিশ্চই আমরা আশা করতে পারি যে এর বদল আমরা আসল দীদারের এলাহী লাভ করতে পারবএক হাদীসে বলা হয়েছে হে লোকসকল! তোমরা কেয়ামতের দিন সামনা সামনি অবস্থায় আল্লাহকে দেখবেকিন্তু এর জন্য যদি তোমরা কোন অবাধ্য আমল করে থাক তা হচ্ছে ফজরের নামাজএ নামাজ কখনও পরিত্যাগ করো নামহাবী (স:) বলেন : যে প্রভাতে উঠে নামায পড়তে যায় সে ঈমানের ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় আর যে নামায বাদ দিয়ে পড়ে থাকে অথবা বাজারে যায় সে শয়তানের ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় (ইবনে মাজাহ)
যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠ হওয়ার কারণ
যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠকরণের মাঝে রহস্য হচ্ছে, এ সময় আসমানেফেরেশতা তসবিহ পাঠ করেনআসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং যাবতীয় দোয়া কবুল হয়এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে নামায ফরজ করে দিয়েছেন যাতে নামাযীগণ ফেরেশতাদের সঙ্গী হতে পারেনতাদের দোয়া কবুল হয় এবং তাদের আমল শীঘ্র আসমানে পৌছে যায়যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার দেহ আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন এবং সে দোগে যাবে না। (মাজালেসে সানিয়া)
আসরের ওয়াক্ত নিদিষ্ট হওয়ার কারণ
1.                  হযরত আদম (আ:)আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করেনফলে তিনি বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দরুন বেহেশত হতে বহিষ্কৃত এবং দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হনএ সকল ঘটনা আসরের সময়েই ঘটেছিলতাই এ সময়ে উম্মতে মুহাম্মদীকে পানাহার হতে বিরত থেকে নামাযে মশগুল থেকে কিছুক্ষণ রোজাদারের মত কাটাতে আদেশ করা হয়েছেযাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্ঠি এবং রহমত লাভ করার যৌগ্য হতে পার
2.                  হযরত ইউনুস (আ:)কে আল্লাহ তায়ারা চারটি অন্ধকার জায়গায় কায়েদ করে রেখেছিলেন :( 1) দরিয়ার অন্ধকার।(2)মাছের পেটের মধ্যকার অন্ধকার (3)হযরত ইউনূস (আ:)কে ভক্ষণকারী মৎসটিকে অন্য একটি মৎস ভক্ষণ করেছিল এ মৎস দুটির পেটের অন্ধকার (4) রাত্রের অন্ধকার
হযরত ইউনুস (আ:) আল্লাহ তায়ালার দেয়া এ চারটি অন্ধকারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে ভীত সন্ত্রস্তভাবে নিন্মের দোয়াটি পড়েছিলেন:
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালেমিন
ফলে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৎস হযরত ইউনূস (আ:)কে যমীনে পরিত্যাগ করে আসলকোরআন পাকে আছে : যদি তিনি হযরত ইউনুস (আ:)মাছের পেটে থেকে তসবিহ না পড়তেন তাহলে তিনি কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে তেকে যেতেনযখন ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে বের হলেন তখন ছিল আসরের ওয়াক্তহযরত ইউনুস (আ:) মুক্তি লাভ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য চার রাকাত নামায পড়েনতাই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর এই চার রাকাত নামায ফরজ করে দিয়েছেন যাতে তারা ইউনুস (আ:) এর মহাবিপেদের কথা স্মরণ করে এবং নামাযের বরকতে হযরত ইউনূস (আ:) এর ন্যায় যাবতীয় অন্ধকার এবং মুসিবত হতে বেঁচে থাকতে পারে
মাগরিবের নামায নিধারণ করার কারণ
1.                   মাগরীবের সময়ে হযরত আদম (আ:) এর সেজদা ও দোয় কবুল হয়েছিলতাই এ সময় শোকরানা নামায পড়েছিলেনআর যেহেতু আদম (আ:) এর দোয়া কবুল হওয়া তাঁর আওলাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অপরীসীম অনুগ্রহ তাই কৃতজ্ঞতা প্রশাশের জন্য তাঁর আওলাদের উপর এ সময়ের নামায ফরজ করে দেওয়া হয়েছে
2.                   হযরত ইয়াকূব (আ:) এর পুত্র হযরত ইউসূফ (আ:)বিচ্ছেদে 40 বছর পযর্ন্ত শোকাকুল অবস্থায় কাটানঅত:পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি সদয় হনহযরত ইউসূফ (আ:)এর দূত তাঁর জামা নিয়ে হযরত ইয়াকূব (আ:) এর দরবার উপস্থিত হলেনএ জামা তার চহারায় লাগানো মাত্র তাঁর যাবতীয় দু:খ দূরিভূত হয়হযরত ইয়াকূব (আ:) তখন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের জন্য তিন রাকাত নামায পড়েনএ ক্ষেত্রে হযরত ইয়াকূব (আ:) কে অনুসরণ করার জন্যই আমাদের উপর এ নামায ফরজ করে দিয়েছেন
3.                   মাগরীবের সময় সূর্যাস্তের সাথে সাথে দিনের আলো প্রসারিত হয় এবং রাতের আধাঁর সমগ্র জগতকে গ্রাস করতে থাকেতখন রাতের আধারে নানা রকম ক্ষতিকারক জন্ত্রু ,ভূত প্রেত প্রভৃতি নিজ নিজ অবসথান থেকে বের হয়ে এখান থেকে সেখানে ঘুরাফেরা করতে থাকেমহানবী (স:) এ সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে ঘরের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেনএক কথায় রাত আসার সাথে সাথেই অনেক রকমের বালা মসীবত আসতে শুরু করেতাই আল্লাহ তায়ারা এ সময় মাগরীবের নামায ফরজ করে দিয়েছেন যাত তার বান্দারা এর বরকতে যাবতীয় বিপদ আপদ হতে নিরাপদ থাকতে পারে
 এশার নামায ফরজ করার কারণ
1.                  নীল দরিয়া পাড় হওয়ার দিন হযরত মূসা (আ:) চার প্রকার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলেন
(1)নিজে নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা।(2) নিজের সঙ্গীদের নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা   (3)ফেরাউনদের কবল হতে রক্ষা পাওয়ার চিন্তা (4)ফেরাউন ও তার লোকদের ধ্বংসের চিন্তাআল্লাহ তায়ালা এশার সময় ফেরাউন ও তার লোকদের নীল নদে ডুবিয়ে মারেনকোরআন পকে আছেএবং আমি ফেরাউনদের লোকদেরকে ডুবিয়েছি আর তোমরা তা দেখেছিলে
উপরে লিখিত চার প্রকার চিন্তা হতে মুক্তি পেয়ে মূসা (আ:) এশার সময় চার রাকাত শোকরানা নামায পড়েছিলেনআল্লাহ তায়ালা ঐ চার রাকাত নামায উম্মতে মুহাম্মদীর নিকট ফরজ করেনযাতে হক ও বাতিলের মোকাবিলায় হকের চিরন্তন বিজয়ের জন্য তারা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাকেকেননা যাবতীয় সফলতা একমাত্র আল্লাহর তরফ হইতে আসেকোন মানুষ নীজ শক্তিতে তা হাসিল করতে পারে না
2.                  নবী করীম (স:) এই এশার সময়েই মেরাজে গমনের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেনকিন্তু এই বিশেষ মেরাজ তো নবীর জন্যই নির্ধারীত ছিলতাই এর স্মৃতি রক্ষার জন্য এশার নামাযকেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেনহাদীস শরীফে এসেছেনামায মুমিনদের জন্য মেরাজ
3.                  এশা ছাড়া অন্য নামাযের সময় অন্যান্য ধর্মের  লোকেরাও তাদের মাবুদের উপাসনা করে থাকেকিন্তু এশা এমন একটি সময় যখন মুসলমানরাই আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকেজ্বীনও মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে এবং আমি জ্বীন ও মানবজাতীকে একমাত্র আমার এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছিমহানবী (স:) বলেছেন : মুনাফেকদের নিকট এশা ও ফজরের নামাযের চেয়ে কঠিন কোন নামায নেইযদি তারা জানত যে, এর জন্য কত অসীম সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই নামাযে শরীক হতো (মুসলীম)
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে নামায হলো ইসলামের মূল চাবিকাঠিএটি ছাড়া কোন মুসলমান ব্যক্তিই জান্নাতে জাইতে পারবে নাআল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার তওফিক দান করুন আমিন
সুত্র: আমলে নাযাত    

No comments:

Post a Comment